হিজামা কিভাবে করতে হয়, কি কি বেনিফিটস আছে এতে ?

Abdus Sobur Choudhury
Abdus Sobur Choudhury
Cover Image for হিজামা কিভাবে করতে হয়, কি কি বেনিফিটস আছে এতে ?
4 min
Loading...

হিজামা হচ্ছে একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি ,যাতে মানুষের সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতা বিদ্যামান রয়েছে। আর এটি হচ্ছে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর রেখে যাওয়া একটি সুন্নতি চিকিৎসা পদ্ধতি। যদিও এ চিকিৎসা এখনো অনেকের কাছে অপরিচিত কিন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ চিকিৎসার বেশ প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে মাশাআল্লাহ আমদের দেশেও এ চিকিৎসার বেশ প্রসার ঘটছে ।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:

জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তার মধ্যে হিজামাই হল সর্ব উত্তম।
— আল-হাকিম, হাদিস নম্বরঃ ৭৪৭০


হিজামার পদ্ধতিঃ

শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে মেশিনের সাহায্যে দূষিত রক্ত (Toxins) চুশে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, হিজামায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করা উত্তম এবং প্রত্যেকের চিকিৎসায় ভিন্ন ভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত যাতে রক্তজীবাণুর মাধ্যমে রোগ সংক্রমিত হতে না পারে।


হিজামা করার ক্ষেত্রে কিছু দিক নির্দেশনাঃ

১. নিয়তকে একেবারে পরিশুদ্ধ রাখা যে শিফা/রোগ মুক্তি শুধু মাত্র আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে আসে।
২. খালি পেটে হিজামা করা উত্তম।
৩. গোসল করে হিজামা করাটা ভালো।
৪. হিজামার আগের দিন ও পরের দিন সঙ্গম না করা ভালো।
৫. ইহরাম/সাওম অবস্থায় হিজামা করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে মুহরিম ও সাওম অবস্থায়ও হিজামা করেছেন।
৬. স্বাভাবিক অবস্থায় সপ্তাহের সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতি বার করা ভালো। এছাড়াও আরবি মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখ হিজামা করানো উত্তম। তবে প্রয়োজনে যে কোন দিন, যে কোন সময়েও হিজামা করা যায়।


হিজামা এক ধরণের চিকিৎসা যা শরীর থেকে রোগের জন্য দায়ী জীবাণু সরিয়ে ফেলে। এর মাধ্যমে বর্তমানে সংক্রামক সকল রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এছাড়া অসংক্রামক অনেক রোগও ভালো হয় নিয়মিত হিজামা করালে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও রক্ত পরিষ্কার রাখে।

হিজামাকে নববী চিকিৎসা বলা হয়। কারণ মেরাজের রাতে স্বয়ং ফেরেশতাগণ আল্লাহ্‌র নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কে এ বিশেষ চিকিৎসাটি তাঁকে ও তাঁর উম্মাতদের করাতে বলেছেন।

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মি‘রাজে যাওয়ার সময় তিনি ফিরিশতাদের যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তারাই বলেন,

“হে আল্লাহর নবী! আপনি অবশ্যই হিজামা করাবেন এবং আপনার উম্মাতদের ও এটি করাতে বলবেন।”
— সুনানে ইবনে তিরমিযী, হা/৩৪৬২, ৩৪৭৯


রাসূল (সাঃ) নিজে হিজামা করিয়েছেন

হিজামা এমন একটি চিকিৎসা যাতে অন্যান্য মেডিকাল ড্রাগসের মত কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। কেবল নিরাময় আছে (সুবহানাল্লাহ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লাম তাঁর নিজের জন্য এ চিকিৎসাটি করিয়েছিলেন—ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে কিংবা বিষ দ্বারা আক্রমণ করা হলে।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন:

এক ইহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বিষযুক্ত গোশত খেতে দিয়েছিল... তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন।
— মুসনাদে আহমাদ ১/৩০৫ (সনদ হাসান)


ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন:

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন যাদু দ্বারা পীড়িত হন তখন তিনি মাথায় শিঙ্গা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ, যদি সঠিকভাবে করা হয়।”
— যাদুল মা‘আদ ৪/১২৫-১২৬

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত:

নবী করীম (সাঃ)-এর (পায়ে) যে ব্যথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম অবস্থায় হিজামা করিয়েছিলেন।
— নাসাঈ হা/২৮৫২


আধুনিক গবেষণায় হিজামা

বহু দেশেই এ চিকিৎসাটি এখন করা হচ্ছে। বিশেষ করে UKUSA-তে এ চিকিৎসার গুরুত্ব বুঝতে পেরে এর উপর রীতিমত হিজামা রিসার্চ সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ক্যানসারের মত মারণ ঘাতক অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাও সম্ভব সুলভ-মূল্যের এই চিকিৎসা দ্বারা।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজে নিয়েছেন ও অন্যদের করতে বলেছেন:

“তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও, হিজামা সেগুলোর মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা, অথবা এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক।”
— মুসলিম হা/৩৯৩০


সুতরাং, এটি একটি সুন্নাহ চিকিৎসা যা হাদীস দ্বারা বিশদভাবে আলোচিত এবং বিজ্ঞান দ্বারা এখন প্রমাণিত। এটি যে কোন রোগের জন্য করাতে পারেন।

Share
Home
হিজামা কিভাবে করতে হয়, কি কি বেনিফিটস আছে এতে ? | Hijama & Ruqyah Foundation