কালোজিরা যদি সকল রোগের প্রতিষেধক হয় তাহলে এর থেকে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না কেন?

কালোজিরা যদি সকল রোগের প্রতিষেধক হয় তাহলে এর থেকে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না কেন?
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন- কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধ। তাহলে নিয়মিত কালজিরা খেলেও রোগ সারে না কেন? কালিজিরা খাওয়ার কি কোনো নিয়ম আছে?

উত্তর:
প্রথমে আমরা কালোজিরা সম্পর্কে হাদিসে কী বলা হয়েছে তা জেনে নিব। এ সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
▪ ১) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
عَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ فَإِنَّ فِيهَا شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ السَّامَ ‏”‏ ‏.‏ وَالسَّامُ الْمَوْتُ
“তোমরা এই কালোজিরা ব্যবহার করবে। কেননা, এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক রয়েছে।” [সূনান তিরমিযী, হাদিস নম্বরঃ [2048]অধ্যায়ঃ ৩১/ চিকিৎসা (كتاب الطب عن رسول اللَّهِ ﷺ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন]

▪ ২) আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন:
فِي الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ، إِلاَّ السَّامَ
“কালোজিরায় মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে। (বুখারী পর্ব ৭৬ অধ্যায় ৭ হাদিস নং ৫৬৮৮; মুসলিম ৩৯/২৯ হাঃ ২২১৫)
▪ ৩) বুরায়দা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ هَذِهِ الْحَبَّةَ السَّوْدَاءَ فِيهَا شِفَاءٌ ، قَالَ وَفِي لَفْظٍ : قِيلَ وَمَا الْحَبَّةُ السَّوْدَاءُ ؟ قَالَ الشُّونِيزُ قَالَ
وَكَيْفَ أَصْنَعُ بِهَا ؟ قَالَ : تَأْخُذُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ حَبَّةً فَتَصُرُّهَا فِي خِرْقَةٍ ، ثُمَّ تَضَعُهَا فِي مَاءٍ لَيْلَةً فَإِذَا أَصْبَحْتَ قَطَرْتَ فِي الْمَنْخِرِ الْأَيْمَنِ وَاحِدَةً وَفِي الْأَيْسَرِ اثْنَتَيْنِ ، فَإِذَا كَانَ مِنَ الْغَدِ قَطَرْتَ فِي الْمَنْخِرِ الْأَيْمَنِ اثْنَتَيْنِ وَفِي الْأَيْسَرِ وَاحِدَةً ، فَإِذَا كَانَ فِي الْيَوْمِ الثَّالِثِ قَطَرْتَ فِي الْأَيْمَنِ وَاحِدَةً وَفِي الْأَيْسَرِ اثْنَتَيْنِ
নিশ্চয় এই কালোজিরায় আরোগ্য রয়েছে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কালোজিরা কী? তিনি বললে, শুনীয। প্রশ্ন করলেন: কিভাবে তা ব্যবহার করবো?
তিনি বললেন:
“২১টি কালোজিরার ১টি পুটলি তৈরি করে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখবে এবং সকালে (পুটলির পানির ফোঁটা এ নিয়মে নাসারন্ধ্রে ব্যবহার করবে) “প্রথমবার ডান নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। পরের দিন বাম নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং ডান নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। তৃতীয় দিন ডান নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা ও বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা।” (আবু নুআইম-কিতাবুত ত্বিব, মুস্তাগফিরী-কিতাবুত ত্বিব-সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারী থেকে নেয়া)
কালোজিরা সম্পর্কে একাধিক বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদিসগুলো অবশ্যই সত্য। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নাই। কারণ তিনি, যা বলতেন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে বলতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ- إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ
এবং তিনি মনগড়া কথা বলেন না। এটি (আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিকট) প্রেরিত ওহী ছাড়া অন্য কিছু নয়।” (সূরা নজম: ৩ ও ৪)

♻ কালোজিরা থেকে উপকৃত হতে হলে কী করণীয়?

কালোজিরা থেকে প্রকৃত উপকার পেতে হলে অবশ্যই তার ব্যবহার পদ্ধতি জেনে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
কখনো কালোজিরার তেল, কখনো পাউডার, কখনো মধু বা অন্যান্য জিনিসের সাথে মিশ্রণ, কখনো ফোটা আকারে ঢেলে, কখনো ব্যান্ডেজ করে এবং ব্যবহারের সঠিক সময় ও নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়গুলো গবেষণা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বিশেষজ্ঞদের নিকট থেকে জানতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, কালোজিরা ব্যবহার করে সকল প্রকার রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ইচ্ছে মত কালোজিরা ব্যবহার করলেই সকল রোগের ক্ষেত্রে সমান ভাবে সাফল্য নাও পাওয়া যেতে পারে।

♻ তবে মনে রাখতে হবে, রোগ থেকে আরোগ্য দান কারী একমাত্র আল্লাহ। ঔষধ-পথ্য কেবল মাধ্যম। সুতরাং আল্লাহ যদি না চান তাহলে কোন ওষুধই কাজ করে না।
কারণ আল্লাহ হয়তো বান্দাকে রোগব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করেন অথবা এর মাধ্যমে তার গুনাহ মোচন করেন, আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং সেখানে তাকে এর চেয়েও বড় পুরস্কারে ভূষিত করেন যা দুনিয়ার সকল কল্যাণ এর থেকেও অধিক উত্তম। এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

সুতরাং ঝাড়ফুঁক, কালোজিরা, মধু, হোমিও, এলোপ্যাথি, ইউনানি সকল প্রকার ওষুধ ব্যবহার করে100% রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে- এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ সুবহানাতায়ালা রোগ থেকে মুক্তি দান কারী এটা তার ইচ্ছার উপরে নির্ভরশীল।
আমাদের কাজ হবে আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং বিভিন্ন পথ্য ও ঔষধ ব্যবহার করা।
আল্লাহ চাইলে অবশ্যই সুস্থতা অর্জিত হবে। অন্যথায় তিনি অন্যভাবে বান্দাকে এর বিনিময় দান করবেন। এ বিশ্বাস রাখাই মুমিনের কর্তব্য।
যেমন জমিনে সঠিক পদ্ধতিতে কৃষি কাজ ও চাষাবাদ করে ও অনেক সময় ফসল পাওয়া যায় না, সঠিকভাবে গাছ পরিচর্যা করার পরেও তাতে ফল ও ফুল ধরে না, দাম্পত্য জীবন সঠিকভাবে অতিবাহিত করার পরেও সন্তান ভাগ্যে জোটে না, এ্যালোপ্যাথিক, হোমিও, ইউনানি ইত্যাদি ঔষধ যথার্থ নিয়মে ব্যবহার করার পরেও অনেক সময় রোগ সারে না। কারো উপকার হয়; কারো হয় না।
সুতরাং এই বিষয়গুলো সর্বদা মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু যথার্থ নিয়মে কালোজিরা ব্যবহার না করার ফলে প্রত্যাশিত ফলাফল লাভ না করলে কোনোভাবেই হাদিসের প্রতি কু ধারণা পোষণ করা বৈধ নয়। যদিও ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকরা এই হাদিসের ব্যাপারে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে।
আমরা দোয়া করি আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করুন। আমীন।

বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান কালোজিরা গবেষণা করে এর মাধ্যমে অনেক রোগের চিকিৎসায় বিস্ময়কর ফলাফল অর্জন করেছে। আমরা আশা করি, সময়ের ব্যবধানে এর আরও ওষধি গুণ মানবজাতির সামনে প্রতিভাত হবে ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব

Help Line :
Dhaka Uttora : +88 01972 668 345 ,
Sylhet Shahporan +88 01715 525 747
Sylhet Kumarpara : +88 01704 992 056

(মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা এবং মহিলা থেরাপিষ্ট রয়েছেন)

Your Title Goes Here

Your content goes here. Edit or remove this text inline or in the module Content settings. You can also style every aspect of this content in the module Design settings and even apply custom CSS to this text in the module Advanced settings.