পিঠব্যথা সমস্যা যে কারো জন্যই খুব যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা। পিঠব্যথা সম্বন্ধে জানতে হলে প্রথমে মেরুদণ্ড (Spine) সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। মেরুদণ্ড একটি মাত্র হাড় নয়, অনেকগুলো হাড়ের সমন্বয়ে এটা তৈরি। প্রতিটি হাড় কার্টিলেজের কুশন দিয়ে পৃথক রয়েছে। এই কুশনকে বলে ডিস্ক (Disc)। এর কারণে মেরুদণ্ড সামনে-পেছনে বাঁকানো সম্ভব। মেরুদণ্ড নিখুঁতভাবে সোজাসুজি বা সিধা নয়।
শুধু বয়স হলেই যে এমন হয়, তা নয়। নানা কারণে এ ব্যথা হতে পারে। পিঠব্যথা প্রতিরোধের প্রধান শর্ত হলো- যেকোনো কাজ করার সময় মেরুদণ্ডের এই আকৃতি অক্ষুণ্ন রাখা। পেটের এবং পিঠের মাংসপেশিগুলো মেরুদণ্ডকে সাপোর্ট দেয় এবং নড়াচড়ায় সহায়তা করে।
পিঠে ব্যাথার কারনগুলো মেরুদণ্ড এবং তার সহায়তাকারী মাংসপেশিগুলো থেকে উৎপন্ন হতে পারে। এছাড়াও শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো যাদের স্নায়ু সরবরাহের কিছু শাখা পিঠে বিস্তৃত অবস্থায় রয়েছে তা থেকেও পিঠে ব্যাথা হয়ে থাকে।
পিঠে ব্যথা নিম্নোক্ত কারণসমূহের জন্যে হতে পারে-
- মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকৃতি বজায় রাখতে পিঠ ও পেটের মাংসপেশি গুলো দুর্বল হয়ে পড়া।
- মেরুদণ্ডের হাড়ের দুর্বল স্থাপন, যার কারনে মেরুদণ্ডের আকৃতি বজায় থাকে না।
- দীর্ঘসময় ধরে বসে থাকলে, দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা একই অবস্থানে থাকলে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ থাকার কারণে মাংসপেশিতে টান পড়ে, মাংসপেশি সংকুচিত হয়।
- হঠাৎ করে শরীরে মারাত্মক ঝাঁকি খেলে অনেকসময় মাংশপেশিতে টান পড়ে, মাংসপেশি ছিঁড়ে যেতে পারে।
- দীর্ঘসময় বালিশ ছাড়া কাত হয়ে ঘুমালে অথবা বিছনার সমস্যার জন্য
- কাঁধের জোড়া একবার বা অধিকবার স্থানচ্যুতি হলে
- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অসটিওআর্থ্রাইটিস ও প্রদাহ আর্থ্রাইটিস হলে
- আঘাত বা রোগের কারণে জোড়ার আবরণ, লিগামেন্ট, টেনডেন ও পেশি দুর্বল হলে বা ছিঁড়ে গেলে
- পেশি, টেনডেন ও বার্সার প্রদাহ
- কলার বোন ভাঙলে, ছোট হয়ে জোড়া লাগলে বা স্থানচ্যুতি হলে
- ক্যালসিয়াম কমে হাড় ভঙ্গুর (অসটিওপোরোসিস) হলে
- রোগ বা আঘাতের কারণে হাড় ভাঙ্গলে
- হাড়ের ইনফেকশন ও টিউমার
- স্নায়ু পিন্চড (ইনট্রাপমেন্ট) বা ইনজুরি
- পিত্তথলি, ফুসফুস এবং হূদরোগের কারণে ও স্ক্যাপুলায় ব্যথা হলে, একে রেফার্ড পেইন বলে
- হঠাৎ শরীর মারাত্মক ঝাঁকি খেলে কিংবা শরীর বাঁকা হলে। এতে মাংসপেশিতে টান পড়ে এবং পেশি ছিঁড়ে যেতে পারে। কোনো ভারী জিনিস ওঠানোর সময় এ অবস্থা হতে পারে।
- মেয়েদের মাসিকের সময় জরায়ুর সংকোচনের কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মানসিক যন্ত্রণাও পিঠ ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। মানসিক চাপে ভুগলে পেশী, ঘাড় ও পিঠে চাপ পড়ে।
পিঠে ব্যথার প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা:
পিঠব্যথা প্রতিরোধ করতে হলে সর্বদা মেরুদণ্ডের আকৃতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। এর জন্য যা করতে হবে তা হলো-
- দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।
- চেয়ারে বসে কাজ করার সময় কিংবা চেয়ারে বসে থাকার সময় যদি চেয়ারটি আপনার পিঠকে ঠিকমতো সাপোর্ট দিতে না পারে তাহলে চেয়ার ও আপনার পিঠের মধ্যকার ফাঁকা জায়গাটি পূরণে কুশন বা অন্য কিছু ব্যবহার করুন।
- ঘুমানোর সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করুন। যেমন- শক্ত ও সমতল তোশক বা জাজিমের ওপর ঘুমান। মুখ নিচের দিকে রেখে (উপড় হয়ে) ঘুমাবেন না, চিত্ অথবা কাত হয়ে ঘুমাবেন। ডানপাশ ফিরে ঘুমালে ভাল, সে সময় হাঁটু সামান্য বাঁকা করে ঘুমাবেন।
- একবার পিঠব্যথা হলে ব্যথা সেরে যাওয়ার পর আবার যাতে এ ধরনের ব্যথায় আক্রান্ত হতে না হয় এজন্য হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে।
পিঠের ব্যথার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা:
- পরিমিত বিশ্রাম নেয়া।
- হিজামা বিশেষজ্ঞ এর মাধ্যমে পিঠের ব্যথার জন্য সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে কাপিং বা হিজামা করানো।
- কাপিং বা হিজামার মাধ্যমে হাড়ক্ষয়, উচ্চ রক্ত চাপ, পিঠের ব্যথা, কমরে ব্যথা,পা অবস বা পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরাসহ যেকোন ধরনের ব্যথাজনিত রোগের চিকিৎসা করা যায়।
- কাপিং বা হিজামার অন্যতম গুন হচ্ছে এ চিকিৎসা সাইড এফেক্ট বা পার্শ প্রতিক্রিয়া মুক্ত।
- রোগ ও রোগী ভেদে কপিং বা হিজামা এক বা একাধিক সেশন লাগতে পারে।
- হিজামা বিশেষজ্ঞ কাপিং বা হিজামা পরবর্তী যে গাইড লাইন দেবেন তা যত্নসহকারে ফলো করতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন–হাড়সহ ছোট মাছ, দুধ, ডিম খাওয়া।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
- একান্ত বাধ্য না হলে, সর্বদাই পেইন কিলার (ব্যথা নাশক ঔষদ) ব্যবহার করা হতে বিরত থাকুন। পেইন কিলারের নানাবিদ সাইড এফেক্ট (পার্শপ্রতিক্রিয়া) রয়েছে। যা ক্ডিনীসহ শরীরের অরগ্যান সমূহ নষ্ট করে ফেলে।
পিঠের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী ও বেশী হলে অবশ্যই হিজামা বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করে কাপিং বা হিজামা থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়ে নেয়া উচিত।
আব্দুছ ছবুর চৌধুরী
ফাউন্ডার এবং সিইও
হিজামা এন্ড রুকিয়া ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।