হিজামা এক ধরণের চিকিৎসা যা শরীর থেকে রোগের জন্য দায়ী জীবাণু সরিয়ে ফেলে। এর মাধ্যমে বর্তমানে সংক্রামক সকল রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এছাড়া অসংক্রামক অনেক রোগ ও ভালো হয় নিয়মিত হিজামা করালে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধ করে ও রক্ত পরিষ্কার রাখে।
হিজামাকে নববী চিকিৎসা বলা হয়। কারণ মেরাজের রাতে স্বয়ং ফেরেশতাগণ আল্লাহ্র নবী রাসূল্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কে এ বিশেষ চিকিৎসাটি তাঁকে ও তাঁর উম্মাতদের করাতে বলেছেন।ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মি‘রাজে যাওয়ার সময় তিনি ফিরিশতাদের যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তারাই বলেন, ‘হে আল্লাহর নবী আপনি অবশ্যই হিজামা করাবেন এবং আপনার উম্মাতদের ও এটি করাতে বলবেন।(সুনানে ইবনে তিরমিযী, হা/৩৪৬২) “আপনার উম্মাতদের হিজামা নিতে বলুন।” (সুনানে ইবনে তিরমিযী-৩৪৭৯)
হিজামা এমন একটি চিকিৎসা যাতে অন্যান্য মেডিকাল ড্রাগসের মত কোন সাইড ইফেক্ট নেই। কেবল নিরাময় আছে (সুবাহনাল্লাহ) । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লাম তাঁর নিজের জন্য এ চিকিৎসাটি করিয়েছিলেন।ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে গিয়ে কিংবা তাঁকে বিষ দ্বারা আক্রমণ করা হলে। আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, “এক ইহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিষযুক্ত গোশত খেতে দিয়েছিল। তিনি তাকে সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, কেন তুমি এ কাজ করলে? মহিলাটি উত্তরে বলল, যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর রাসূল হও, তবে আল্লাহ তোমাকে জানিয়ে দিবেন। আর তুমি যদি তাঁর রাসূল না হও, তবে আমি মানুষকে তোমার থেকে নিরাপদ রাখব! যখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এর যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগলেন, তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন। একদা ইহরাম অবস্থায় তিনি ভ্রমণে বের হ’লেন এবং ঐ বিষের যন্ত্রণা বোধ করলেন, তখন তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন।”(মুসনাদে আহমাদ ১/৩০৫, সনদ হাসান)
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন যাদু দ্বারা পীড়িত হন তখন তিনি মাথায় শিঙ্গা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ, যদি সঠিকভাবে করা হয়।”(যাদুল মা‘আদ ৪/১২৫-১২৬)
জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর (পায়ে) যে ব্যথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম অবস্থায় হিজামা লাগিয়েছিলেন।(নাসাঈ হা/২৮৫২)
বহু দেশেই এ চিকিৎসাটি এখন করা হচ্ছে। বিশেষ করে UK ও USA তে এ চিকিৎসার গুরুত্ব বুঝতে পেরে এর উপর রীতিমত হিজামা রিসার্চ সেন্টার করে রিসার্চ করা হচ্ছে। ক্যানসারের মত মারণ ঘাতক অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাও নাকি সম্ভব সুলভ-মূল্যের এ চিকিৎসা দ্বারা।
হিজামা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজে নিয়েছেন ও অন্যদের করতে বলেছেন। “তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সেগুলোর মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক”। (মুসলিম হা/৩৯৩০). এটি যদি উপকারি না হত নবী করীম সাল্লাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এটি নিতে বলতেন না।
সুতরাং এটি একটি সুন্নাহ চিকিৎসা যা হাদীস দ্বারা বিশদভাবে আলোচিত। বিজ্ঞান দ্বারা এখন প্রমাণিত।এটা যে কোন রোগের জন্য করাতে পারেন।যেমন:
হিজামার মাধ্যমে চিকিৎসা সমূহ:
- মাইগ্রেনের ব্যথা (Migraine)
- স্মৃতিহীনতা (Parkinson’s disease)
- উচ্চরক্তচাপ (High Blood Pressure)
- ঘুমজনিত সমস্যা (insomnia)
- দূষিত রক্ত পরিষ্কারকরণ (Purify Blood)
- জয়েন্টের ব্যথা (Gout Pain)
- বাতের ব্যথা (Arthritis)
- পায়ের তালুর ব্যথা(heel pain)
- হাঁটু ব্যথা (Knee Pain)
- মাথা ব্যথা (Head-ache)
- ঘাড়ে ব্যথা (Neck Pain)
- কোমর ব্যথা (Waist Pain)
- মাংসপেশীর ব্যথা (muscles spasm)
- থাইরয়েডের সমস্যা (Thyroid Problem)
- সাইনুসাইটিস (Sinuses problem)
- এজমা/ হাপানি (Asthma)
- রক্তসংবহন তন্ত্রের ইনফেকশন(Blood circulation system)
- টনসিলের সমস্যা (Tonsillitis )
- দাঁত,মুখ, গলা ব্যথা (Larynx, Gums and dental disease)
- গ্যাস্ট্রিক / আলসারের সমস্যা (Gastric/Ulcer)
- মোটা সমস্যা (obesity)
- বিভিন্নরকম চর্মরোগ (Chronic Skin Diseases)
- ত্বকের বর্জ্য নিষ্কাশন (remove toxin)
- পিঠে বা সারা শরীরের (scabies)
- মানসিক সমস্যা (Psycological disorder) ইত্যাদি।