আমাদের দেহে ২৯টি মেরুদণ্ডের হাড় আছে, যার মধ্যে কোমরে আছে পাঁচটি। এই পাঁচটি হাড় থেকে আবার ছয় জোড়া নার্ভ শরীরের নিচের অংশে থাকে। সাধারণত এই অংশটিতে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলেই কোমর ব্যথা হয়।
কেন কোমরে ব্যথা হয়:
- ভারি কোন জিনিস জোর করে তুললে।
- ভারী ব্যাগ পিঠে বহনের জন্য।
- কোমরে চোট পেলে
- হেচট খেয়ে পড়লে
- দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ বা সামনের দিকে ঝুঁকে অনেকক্ষণ কাজ করলে
- অতিরিক্ত নরম বিছানায় শোয়ার জন্য।
- ভুল উপায়ে ব্যায়াম করলে।
- উচুতে কোন জিনিস জোর করে রাখতে বা নামাতে গেলে।
- নিয়মিত গাড়ি চালালে
- সাধারণত কুঁজো হয়ে হাঁটলে বা বসলে
- শরীরের ওজন উচ্চতা অনুযায়ী বেশি হলে
- মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে।
কোমর ব্যথা প্রতিরোধে কী করবেন:
- নিচ থেকে বা মাটি থেকে কিছু তুলতে হলে না ঝুঁকে সঠিক ভার উত্তোলন পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
- চেয়ারে বসার সময় কোমর সোজা রেখে বসুন। এ জন্য দু-একটি ছোট কুশন কোমরের নিচের অংশে রেখে বসতে পারেন। এতে কোমর সোজা থাকবে। দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে, হেঁটে আসুন কিছু সময়ের জন্য বা দাঁড়িয়েও থাকতে পারেন। চেয়ার টেবিল থেকে বেশি দূরে রাখবেন না। সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না। কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিন। এমনভাবে বসুন, যেন হাঁটু ও ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে।
- নরম গদি বা স্প্রিংযুক্ত চেয়ার বাদ দিন। চেয়ারে বসলে পা সামান্য উঁচুতে রাখুন।
- ঘাড়ে ভারী কিছু ওঠাবেন না। পিঠে ভারী কিছু বহন করতে হলে সামনে ঝুঁকে বহন করুন।
- ৩০ মিনিটের বেশি একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না। হাঁটু না ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না। দীর্ঘ সময় হাঁটতে হলে উঁচু হিল পরবেন না।
- অনেকক্ষণ একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন।
- গাড়ি চালানোর সময় স্টিয়ারিং হুইলে সোজা হয়ে বসুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম বা হাঁটুন।
- বসে কাজ করার সময় মেরুদণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় এবং কোমর সোজা রাখুন।
- অতিরিক্ত পেইনকিলার খাবেন না।
- ভুল কোন চিকিৎসা করাবেন না।
- সোজা ভাবে হাটার চেষ্টা করুন।
- কোমরের ব্যথায় ভুগলে বিছানা থেকে ওঠার সময় সতর্ক থাকুন। চিত হয়ে শুয়ে প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার ধীরে ধীরে একপাশে কাত হোন। পা দুটি বিছানা থেকে ঝুলিয়ে দিন, কাত হওয়ার দিকে কনুই ও অপর হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসুন।
- দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করবেন না। দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেন বা গাড়িতে বসে থাকলে ঝাঁকুনিতে কোমর ব্যথা আরো বেড়ে যায়। এ জন্য দীর্ঘ যাত্রাপথের বিরতিতে ট্রেন বা গাড়ি থেকে নেমে পায়চারি বা হাঁটাহাঁটি করুন।
- শক্ত বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এতে পুরো শরীর যেমন সাপোর্ট পায়, তেমনি নিচের দিকের স্পাইনগুলোতে চাপ কমে যায়। শক্ত বিছানা বলতে কিন্তু খালি কাঠ নয়, আমরা যে তোশক ব্যবহার করি সেটিই, তবে খুব বেশি নরম যেন না হয়। কাত হয়ে অথবা চিত হয়ে শোবেন কিন্তু উপুড় হয়ে শোবেন না।
লোয়ার ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথা হতে পারে আপনার পঙ্গুত্বের কারণ
- লোয়ার ব্যাক পেইন এর জন্য অতিরিক্ত পেইনকিলার সেবন,ভুল চিকিৎসা, ভুল সার্জারী সমগ্র বিশ্বে বেশি হচ্ছে।
- আপনি কি লোয়ার ব্যাক পেইন এ ভুগছেন? ভুগে থাকলে এখনি সতর্ক হন। এই ব্যাকপেইন আপনাকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণাধর্মী জরিপে দেখা গেছে যে, বর্তমানে মৃত্যুর হার কমে গেলেও রোগের সংখ্যা বেশ বেড়ে গেছে।
তথ্যঅনুযায়ী,
সমগ্র বিশ্বে ব্যাক পেইন,মাইগ্রেন, বয়সের কারনে কিংবা নানা কারনে কারনে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি, অ্যানিমিয়া এই পাঁচটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই পাঁচটি রোগের কারনে আপনি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন।
বর্তমানে সমগ্রবিশ্বের প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ ভুগছে লোয়ার ব্যাক পেইনের মতন মারাত্মক রোগে।
গবেষক চিকিৎসকদের মতে
“লোয়ার ব্যাক পেইন এর জন্য অতিরিক্ত পেইনকিলার সেবন, ভুল চিকিৎসা, ভুল সার্জারী সমগ্র বিশ্বে বেশি হচ্ছে।”
- নারীদের মধ্যে ব্যাক পেইন কে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা অনেক বেশি। ৫৪% পুরুষ যেখানে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, সেখানে নারীদের সংখ্যা ৪৬%।
লোয়ার ব্যক পেইন বা কোমর ব্যথার চিকিৎসা হিসাবে হিজামা থেরাপী:
- লোয়ার ব্যক পেইন বা কোমর ব্যথার জন্য শরীরের নীচের অংশে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: হাটু ব্যথা, মাংস পেশিতে ব্যথা, পায়ে ঝিঁ–ঝিঁ ধরা ইত্যাদি। এমনকি এর জন্য মাথা ব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এজন্য রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
- হিজামা বিশেষজ্ঞ এর মাধ্যমে লোয়ার ব্যক পেইন বা কোমর ব্যথার জন্য সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে কাপিং বা হিজামা করানো।
- কাপিং বা হিজামার মাধ্যমে হাড়ক্ষয়, উচ্চ রক্ত চাপ, পিঠের ব্যথা, কমরে ব্যথা,পা অবস বা পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরাসহ যেকোন ধরনের ব্যথাজনিত রোগের চিকিৎসা করা যায়।
- কাপিং বা হিজামার অন্যতম গুন হচ্ছে এ চিকিৎসা সাইড এফেক্ট বা পার্শ প্রতিক্রিয়া মুক্ত।
- রোগ ও রোগী ভেদে লোয়ার ব্যক পেইন বা কোমর ব্যথার জন্য কপিং বা হিজামা এক বা একাধিক সেশন লাগতে পারে।
- হিজামা বিশেষজ্ঞ কাপিং বা হিজামা পরবর্তী যে গাইড লাইন দেবেন তা যত্নসহকারে ফলো করতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন–হাড়সহ ছোট মাছ, দুধ, ডিম খাওয়া।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
- একান্ত বাধ্য না হলে, সর্বদাই পেইন কিলার (ব্যথা নাশক ঔষদ) ব্যবহার করা হতে বিরত থাকুন। পেইন কিলারের নানাবিদ সাইড এফেক্ট (পার্শপ্রতিক্রিয়া) রয়েছে। যা ক্ডিনীসহ শরীরের অরগ্যান সমূহ নষ্ট করে ফেলে।
লোয়ার ব্যক পেইন বা কোমর ব্যথার দীর্ঘস্থায়ী ও বেশী হলে অবশ্যই হিজামা বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করে আজই কাপিং বা হিজামা থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়ে নিন।
আব্দুছ ছবুর চৌধুরী
ফাউন্ডার এবং সিইও
হিজামা এন্ড রুকিয়া ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।